পরিকল্পনা
ব্যারিস্টার বাবুর থেকে লুকিয়ে অনেক প্রেমের উপন্যাস পড়েছে বন্দিতা। আজ যেন তার কোনোটার সাথে মিলছে না তার একটাও হিসাব। উনি যদি পরী দিদিকে ভালবাসেন তবে কেন সেদিন রাত্রে এমন কান্ড ঘটালেন? আর যদি না বাসেন তবে কেন স্বযত্নে তুলে রেখেছেন তার চিঠিগুলো? কেন বার বার কলকাতা গিয়ে দেখা করেন তার সাথে? কোন হিসাব মেলেনা। উপন্যাসে প্রেম পর্ব এগোয়ে কাছাকাছি থেকে, আর দূরে থাকলে আসে নানান রকম ভুল বোঝাবুঝি। তবে কি তার প্রশ্নের জবাব সে পাবে যদি পরী দিদি কাছাকাছি থাকে? সেই উদ্দেশেই জ্যাঠামশাইকে গিয়ে বলেছিল সে যে পরী দিদিকে ডাকুন না, আমাদের গ্রামের মেয়েদের স্কুলে ইংরিজি পড়াতে । ধমক দিয়ে নাকচ করেছিলেন ত্রিলোচন বাবু সেই প্রস্তাব। তবে এখন উপায়?
কলকাতা থেকে ফেরা থেকেই অনিরুদ্ধের গলা ভারি, জ্বর জ্বর ভাব। তার হাতে রাতে ওষুধের বড়ি দিয়ে, নিজের সমস্ত শক্তি সংগ্রহ করে বললো বন্দিতা “এত আসা যাওয়া করে হচ্ছে এসব আপনার। কাজের সময় তো থেকেই যেতে পারেন কলকাতায়।” তার হাত থেকে জলের গ্লাস নিয়ে অবাক হয়ে তাকায়ে অনিরুদ্ধ।
“থাকবো কোথায়?”
“কেন, পরী দিদির বাড়ি।”
“ওখানে কেন থাকতে যাবো দীর্ঘ দিন?” কেমন বিরক্ত হয়ে বলে সে, “একটু সর্দি লেগেছে ঠিক হয় যাবো। ”
“আমি তো আপনার ভালোর জন্য বললাম।” তার হাত থেকে গেলাস নিয়ে বলে বন্দিতা।
“এতই চিন্তা যখন চলো আমার সাথে, দেখাশুনা করবে।” মাথা নেড়ে ধমকের সুরে বলে অনিরুদ্ধ, “অন্যের ঘাড়ে নিজের সমস্যা ফেলা কেন?” তার কথায় তাকায় বন্দিতা।
“পারলে যেতাম। এখানে সংসার পড়াশুনা সব আছে আমার।” মুখ বেঁকিয়ে বলে সে।
“আর আমি?” অনিরুদ্ধর প্রশ্নে অপ্রস্তুত সে। তার দৃষ্টি এড়ায় বন্দিতা।
“আপনি? আপনি তো সমস্যা। নিজেই তো বললেন।” হেসে ফেলে বন্দিতা। ঝেড়ে ফেলতে চায় তার অপ্রস্তুত ভাব। কেন করছেন তিনি এমন? যা বলছেন তা কি ঠাট্টা পরিহাস না কি সত্যই অর্থ জেনে? ডাক পরে তার, বটুকের হারানো জিনিস খুঁজতে, চলে যায় সে। অনিরুদ্ধ বসে ভাবে, এমন কথা হঠাৎ কেন মনে হলো তার? আগে তো কোনদিন সে বলেনি তার থেকে দূরে থাকতে। অনিরুদ্ধর দূরত্ব রাখার ফল কি এটা? নাকি সেদিন যা ঘটেছে তা সত্যি পছন্দ হয়নি বন্দিতার তারই ইঙ্গিত দেয় সে? অনিরুদ্ধের হঠাৎ ভয় হয়। কি করে জানবে সে স্ত্রীয়ের মনের কথা।
বটুকের হাতে অনেকগুলো উপন্যাস আনায় বন্দিতা। সব পড়ে দেখবে সে। কি করে বুঝবে পরী দিদি আর ব্যারিস্টার বাবুর মনের কথা? জানতে তাকে হবেই।
একদিন ইস্কুলের মেয়ের জটলা পাকিয়ে কি যেন আলোচনা করছিল, বন্দিতা হাতের বইটা রেখে গিয়ে দাঁড়ালো তাদের মাঝে।
“তুই বল, তোর কি মনে হয়?" হঠাৎ প্রশ্ন করলো কমলা ।
“কি বিষয়?”
সামনে দাঁড়িয়ে ছিল রাজুবালা। সদ্য বিবাহিত সে। ভয় পায় স্বামীকে।
“স্বামীকে ভয় কি?”
“আঘাত করেন উনি।”
“আরে ওটা তো ভালোবাসা।”
“কিন্তু রোজ যে... “
“প্রথম প্রথম কষ্ট হবে তারপর অভ্যাস হয়ে যাবে।” উপদেশ দেয় কেউ কেউ।
“না রে, সবার এমনটা হয়না।” বলে ওঠে একটি মেয়ে “আমার তো পাঁচ বছর হলো এখনো ... “
কৌতুহল হয় বন্দিতার কিন্তু সে চুপ। অনিরুদ্ধ বলে যা কেউ জানেনা তা বই জানে, শুধু সঠিক বইটি বেছে নেওয়ার অপেক্ষা। বন্দিতার মনের প্রশ্নের উত্তর কোন বইতে পাবে সে?
বাড়ি ফিরে সে দেখে গ্রামের লোক জমায়াত হয়েছে। যেন কি একটা গন্ডগোল। কোয়েলীর বারণ সত্যেও এগিয়ে যায় সেদিকে বন্দিতা। একজন স্ত্রী, বয়েস হবে ত্রিশ, বসে কাঁদছেন, সবাই তাকে ঘিরে আলোচনা করছেন ও জমিদার ত্রিলোচন রায় চৌধুরী চুপ করে বসে আছেন।
“এতদিন পর ছেড়ে গেলো? কেন? কিছু তো সমস্যা আছে মেয়েমানুষের।”
“গেলই বা কোথায় ? উধাও তো হতে পারেনা। স্বদেশী করছে কি?”
“আরে অন্য কেউ পছন্দ থাকলে করত বিয়ে, স্ত্রী ছেলেমেয়ের প্রতি কোন দায়ত্ব নেই?”
সেই সব কোলাহলের মাঝে জমিদার গিন্নি এসে দাঁড়িয়েছে ঘোমটা টেনে। সবাই হঠাৎ চুপ। মহিলা কেমন হতাশার দৃষ্টিতে চাইল বন্দিতার দিকে।
“উদ্ধার করুন আমাদের, জমিদারবাবু।” কটাক্ষ করে বলে ওঠে বিধবা শাশুড়ি।
বন্দিতা আর দাঁড়ায়েনা। সরে আসে সেখান থেকে। পরদিন পরী দিদির আসার কথা, তাকে জলখাবার বানাতে হবে। কিছু বইপত্র আনবে পরী দিদি কলকাতা থেকে। গ্রামের মেয়েদের স্কুলে কাজে লাগবে।
কেমন যেন মন ভার থাকে বন্দিতার সারাদিন। ঘরের কাজ সে করে অভ্যাসের মতো কিন্তু মন দিতে পারে না। মহিলার স্থির চোখ দুটো কেমন গ্রাস করতে আসে তাকে। অনিরুদ্ধ দেখে সে বিছানার এক কোণে বসে অন্যমনষ্ক হয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। যখন দু বার ডেকেও সারা পায়ে না গিয়ে আস্তে করে বন্দিতার কাঁধে হাত রাখে সে। চমকে ওঠে বন্দিতা। যেন অজানা সে স্পর্শ।
“আমি... দেখিনি আপনি... “ তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে পরে সে, জল আনতে।
“কি হয়েছে?” প্রশ্ন করে অনিরুদ্ধ।
“কই, কিছু নাতো?” মৃদু হাসে বন্দিতা।
“তুমি এমন অন্যমনস্ক।”
“ওহ!” চুপ করে যায় বন্দিতা, সে কি বলবে অনিরুদ্ধকে সেই মহিলার কথা? আগে তো কত না ভেবেই বলে দিত সে সব কথা ব্যারিস্টার বাবুকে।
“একজন এসেছিলেন গ্রাম থেকে।” জল এনে বলে বন্দিতা। “কুড়ি বছর বিয়ে হয়েছে তার, দুটি সন্তান।” জলে চুমুক দিয়ে তার ম্লান মুখের দিকে তাকায় অনিরুদ্ধ।
“হঠাৎ জানি কোথায় চলে গেছে তার স্বামী। কেমন জানি হঠাৎ সব পরিচয় সব অস্তিত্ত মুছে গেছে তার।”
“তাকে দেখে খুব কষ্ট হল তোমার?” তার হাত দুটো নিজের হাতে ধরে প্রশ্ন করে অনিরুদ্ধ।
“মায়ের কথা মনে পরে গেলো।” হঠাৎ ধরা গলায় বললো বন্দিতা। “এমন কেন হয়? কেন পুরুষের পরিচয় বেঁচে থাকে নারীর অস্তিত্য?” হঠাৎ লক্ষ্য করে সে অনিরুদ্ধর হাত তার হাতের উপর যেন আরো আঁকড়ে ধরেছে। সে সরিয়ে নেয় নিজের হাত।
“আমি যাই, পরী দিদি আসবে কাল। খাবার ব্যবস্থা করি।” আড়চোখে দেখে সে স্বামীর প্রতিক্রিয়া।
“মায়ের কথা মনে পরলে চলো না একদিন, ঘুরে আসি।” বলে অনিরুদ্ধ। “ভালো লাগবে তোমার।” মাথা নাড়ে বন্দিতা। তারপর চলে যায় অন্যমনস্ক হয়ে।
বন্দিতার বিশ্বাস যে পরীদিদি দূর করে দেবে তার মনের সমস্ত অন্ধকার। তাকে সে নিয়ে যাবে ব্যারিস্টার বাবুর কাছে। ওনার সেই রাত থেকে জ্বর সে কথাও বলবে সে। পরীদিদির প্রতিক্রিয়া দেখেই বুঝতে পারবে মনের কথা, আর তাকে সম্মুখে দেখে ব্যারিস্টার বাবুর কি প্রতিক্রিয়া হয় তাও মন দিয়ে দেখবে সে। যখন সেদিন মাঝরাতে অনিরুদ্ধর বারণ সত্তেও তার পাশে বসে জল পট্টি করছিল বন্দিতা, এসব পরিকল্পনা তার মনে ঘুরপাক খায়। অনিরুদ্ধ একদিনের বিশ্রাম নিয়েছে ত্রিলোচনবাবুর ধমক খেয়ে, তা যেন বন্দিতার সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই, এমনটাই মনে করে সে।
সৌদামিনী তুলসীপুর আসে প্রায় মধ্যাহ্নে , সাথে তার গাড়ি, চালক এনে রাখে অনেক বই খাতার সারি
“এগুলো দেখে নাও বন্দিতা।” প্রথমেই বলে সে। “আর কিছু লাগলে আমায় জানিও আমি অনিরুদ্ধবাবুর হাতে পাঠিয়ে দেব।” মাথা নাড়ে বন্দিতা।
“ওনার তো জ্বর কাল রাত থেকে।” হাত মুছে বইয়ের প্যাকেট খুলে বলে সে, আড়চোখে দেখে সৌদামিনীকে।
“ওহ তাই? কি হলো আবার?” কেমন ভদ্রতার খাতিরে বলে সৌদামিনী। সুরটা তেমনি। বন্দিতা কি ভুল বুঝল?
“এখন ঠিক আছেন, জ্বর কম। যান না দেখতে ওপরে, আমি চা নিয়ে আসছি।”
ইতস্তত করে সৌদামিনী, “না থাক যাওয়ার আগে দেখা করে যাব নাহয়।” মৃদু হেসে বলে সে।
সৌদামিনীর চা জলখাবার দিয়ে আদর আপ্পায়ণ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে বন্দিতা। বটুক এসে দেখায় তার নতুন খেলার ফুটবল। বটুক চলে যাওয়াতে যখন আবার মিষ্টি এনে রাখে বন্দিতা, সৌদামিনী ডাকে তাকে।
“আরে একি , তোমার সাথে দেখা করতে এলাম আর তোমার দু’ দন্ড বসার সময় নেই?” সৌদামিনী তার হাত ধরে বসিয়ে দেয় পাশে। “একটু পরেই তো আবার যেতে হবে, নাহলে কলকাতা পৌঁছতে মাঝরাত হবে।”
“থেকে যান না এখানে?” একবার মৃদু সুরে বলে বন্দিতা।
“না না কাল অনেক কাজ আমার, তুমি বলো। কেমন আছো?” বন্দিতা মৃদু হেসে বলে ভালো।
তাদের পড়াশুনা নিয়ে কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটে যখন বিহারী এসে দাঁড়ায়ে সম্মুখে।
“মালকিন।” ইতস্তত করে বলে সে, “তারা আবার এসেছে জমিদার বাবুর কাছে, উনি তো বাড়ি নেই। ছোট মালিককে বলব?”
“কারা?” প্রশ্ন করে বন্দিতা। “তার তো জ্বর, বিহারী।”
“সেই কালকের পরিবারটি। আপনি একবার চলুন না তাহলে, আপনি বললে বুঝবে তারা।”
“আমি?” একটু দোনোমোনো করে সে, “আচ্ছা, গিয়ে বলে আসি পরে আসতে, ওনার বাড়ি ফিরতে আজ দেড়ি আছে।” ঘোমটা টেনে উঠে পড়ে সে। সৌদামিনী দেখে বিহারীর সাথে সে গিয়ে দাঁড়ায়ে চৌকাঠে। সব শুনতে পায়ে সে বসে।
“আমায় উদ্ধার করুন গিন্নিমা। ওরা ভাবছে উনি গেছেন আমার দোষে। বের করে দেবে বলেছে গ্রাম থেকে।” কেঁদে ওঠে আগের দিনে দেখা সেই মহিলা। “আমায় বাঁচান। আমি কোথায় যাব ছেলেমেয়ে নিয়ে? উনি যদি আবার ফেরত আসেন?” তার চোখে ও কন্ঠে এখনো আশা। বন্দিতা সরে যায় যখন উনি তার পায়ে পরেন ।
“কি করছেন কাকিমা! উঠুন।” সে স্পর্শ করে আলতো করে মহিলার কাঁধে। “এমন ভেঙে পরলে আপনার ছেলেমেয়েকে কে দেখবে?” সে খানিক ভেবে তাকায় বিহারীর দিকে।
“ওনাকে বাড়ি নিয়ে যাও, আর ওদের বলে দিও ওরা যদি আমাদের না জানিয়ে এনাকে কোনরকম বিরক্ত করে কিংবা গ্রাম থেকে তারায়ে আমি নিজে যাব তাদের কাছে।” মহিলার দিকে ফিরে সে বলে “এর সাথে যান কাকিমা, আমি থাকতে আপনাকে কেউ গ্রামছাড়া করবেনা। কথা দিলাম। শ্বশুর মশাই কাজে গেছেন বাইরে। আজ তো রাত হবে, আপনি বরং কাল আসুন, আমি কথা বলিয়ে দেব।” তার আশ্বাসে যেন ধরে প্রাণ আসে মহিলার। চলে যায় চোখ মুছতে মুছতে বিহারীর সাথে গ্রামের দিকে। একটা হতাশার প্রশ্বাস ফেলে এসে বসে আবার বন্দিতা।
“কি হয়েছে ওনার?” জিজ্ঞেস করে সৌদামিনী। বন্দিতা চোখ তুলে চায়, তার দৃষ্টি অল্প ঝাপসা।
“কুড়ি বছরের সংসার ওনার, ছেলে মেয়ে আছে। হঠাৎ স্বামী কোথায় চলে গেছেন।” খানিকটা আবেগহীন স্বরে বলে সে।
“ওমা, সে কি!” আতকে ওঠে সৌদামিনী। “এবার?”
“পুরুষহীন সংসারে যেন কোন অস্তিত্ব নেই নারীর। এমনটা কেন বলতে পারবে কেউ?” হঠাৎ তার হাতে হাত রেখে প্রশ্ন বন্দিতার, “এই নারী কি কম করেছে সংসারের জন্য?”
“এমনটাই হয়, এটাই বাস্তব।” তার হাত চেপে ধরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সৌদামিনী। “ক’জন মহিলা পারেন নিজের পরিচয় দাঁড়াতে?”
“কিন্তু এমন কি করে করতে পারে কেউ? কোনো মায়া দয়া নেই? ছেলে মেয়েদের প্রতিও না?”
“কার মনে কি থাকে আমরা কি করে জানবো বলো?” সৌদামিনী বলে ওঠে। “আমার বাবা তো বলে, যে অন্যায় করে তার কাছেও সেটি করার উপযুক্ত কারণ থাকে।”
“তা বলে কি অন্যায় মেনে নেওয়া যায়?” হঠাৎ তাকায়ে তার দিকে বন্দিতা এক দৃষ্টে। “আপনার সাথে অন্যায় করলে আপনি ক্ষমা করতেন?”
“কে জানে, আমি তো ন্যায় অন্যায়ই বুঝিনা বাবা ঠিক করে।” সৌদামিনী বলে ওঠে “হয়তো স্ত্রী বা সংসারের প্রতি টান ছিলনা তার। এমন তো অনেক দেখা যায়ে আজকাল।” বন্দিতা সায় দেয়।
“অনেকসময় আমরা ভাবি একটা সম্পর্ক বা মানুষ আমাদের জন্য সঠিক, জানো তো? কিন্তু পরে বোঝা যায়ে তা নয়।” থেমে বলে সৌদামিনী, বন্দিতার দৃষ্টি তার দিকে, পলক পড়ছেনা।
“যেমন?” জিজ্ঞেস করে সে। সৌদামিনী ভাবে কিছুক্ষণ। কথা যখন উঠেছে এবং বন্দিতা যখন এই সমস্ত অনুভূতি উপলব্ধি করার বুদ্ধি রাখে, তার থেকে কেন গোপন করবে সৌদামিনী? কোন ভুল তো সে করেনি।
“আমার কথাই বলি। একবার আমি যখন অনেক ছোট আমার বাবা বিয়ে ঠিক করেছিল আমার। আমি ভাবতাম সেটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য।” বন্দিতার মুখ হালকা ফেকাসে হয় সৌদামিনীর কথায় ।
“তারপর?” গলা না কাঁপিয়ে বলার চেষ্টা করে সে।
“তারপর বুঝলাম আমি ভুল বুঝতাম।”
“মানে?” বন্দিতার মুখে ভ্রূকুটি। এসব কথা হঠাৎ তাকে কেন বলছে সৌদামিনী?
“মানে ভালবাসতাম না তাকে।” সৌদামিনীর কথায় মুখ হা হয়ে যায়ে বন্দিতার। “আমার মনের ভুল ছিল।” মৃদু হাসে সৌদামিনী। হঠাৎ কেমন রাগ হয় বন্দিতার। মনের ভুল আবার কি কথা? তার মানে ব্যারিস্টার বাবুর অনুভূতি নিয়ে কি ছিনিমিনি খেলছে পরী দিদি ? তিনি কি জানেন সে কথা? কষ্ট পাবেন তো জানলে। কত কি ভেবে ফেলে সে।
“তাকে বললেন সে কথা?” জিজ্ঞেস করে বন্দিতা।
“কি?” খানিকটা অনমনস্ক হয়ে গেছিলো সৌদামিনী, তাই প্রশ্নটার পুনরাবৃত্তি ঘটে বন্দিতার মুখে।
“আমি কি বলব? জানলাম তিনিও যে একই তিমিরে।”
“সে কি?” কেমন আঁতকে ওঠে বন্দিতা, তারপর নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করে, “সে কি? কি করে জানলেন?”
“তিনি নিজে বললেন যে।” সৌদামিনী বলে “আমার বলার আগেই।”
“ওহ” হঠাৎ চুপ বন্দিতা। আবার সব হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে তার।
“আমি যে কি অপরাধ বোধ থেকে বেঁচেছিলাম ভাই তা বলে বোঝাতে পারব না।”সৌদামিনী মৃদু হেসে বলে “তাই বলছি, দু দিক না জেনে সব বিচার করা উচিত না। কে জানে কার মনে কি থাকে।”
বন্দিতা সায় দেয় ঠিকই কিন্তু কোনো কথাই যেন আর তার মনে ঢোকেনা । অন্ধকার তাড়াতে যে পরীদিদির আগমন, সে যেন একরাশ কুয়াশায় আছন্ন করে যায় বন্দিতার মনকে।
Comments
Post a Comment