Skip to main content

Oprotyashito

 অপ্রত্যাশিত


বন্দিতার বিয়ে হয় ফাল্গুনে, তার কিছুদিন পর আসে প্রথম কালবৈশাখী। অনিরুদ্ধর ভালই লাগে ঝড় বৃষ্টি। বিলেতে থাকা কালীন লন্ডনের বৃষ্টি তার মোটেও ভাল লাগতনা। মনে পড়ত তুলশিপুরের আলাদা এক বৃষ্টির কথা। সোঁদা মাটির গন্ধ, ছাদে ভেজা, বাবার কাছে বকুনি খাওয়া আর মায়ের স্নেহের স্পর্শ। বৃষ্টিতে ভিজে একবার গ্রামের ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলেছিল সে। তারপর কাঁদা মেখে বাড়ি আসায় সে কি মার খেয়েছিল বাবার কাছে। মা তখন যত্ন করে কাঁদা মুছিয়ে গরম দুধ করে দিয়েছিলেন। চুপি চুপি তাকে বলেছিলেন নিজের ছেলেবেলার দুষ্টুমীর কথা। তিনিও এই ভাবেই সবার কথা অবজ্ঞা করে ভিজতে যেতেন ছাদে। মায়ের মারা যাওয়ার পর আর কোনদিন ভেজেনি অনিরুদ্ধ।

সেবার কালবৈশাখীর ঝড় যখন উঠল, সে বৈঠক খানায় বসে কি একটা হিসাব দেখছিল। হঠাৎ বাতি চলে গেল আর তার সাথে সে শুনতে পেল বটুকের গলা , “বৌঠান, ছাদে এসে দেখো কত আম পড়েছে।” অমনি অন্ধকারেই শোনা গেল পরিচিত নূপুরের শব্দ। অনিরুদ্ধ একবার ভাবল কি ভাবে এই ক’দিনে বাড়ির সব কিছুই জেনে গেছে বন্দিতা। ক’ ধাপ সিড়ি, চৌকাঠ, সব। বিহারী হাওয়ার সাথে লড়াই করে কেরসিনের আলো জ্বালে। ততক্ষণে অনিরুদ্ধ উঠে গেছে চিলেকঠায়। বটুক ও বন্দিতা ঝড়ের বেগ অগ্রাহ্য করে আম তুলছে, বাড়ির পাশের আম গাছটা যেন তাদের জন্যই একটু সরে এসছে ছাদের উপর। হঠাৎ শুরু বৃষ্টি। অনিরুদ্ধ ধমক দিয়ে বলে “বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধুক আর কি?” বটুক দাদার ভয় নেমে যায়, গামছায় বাঁধা আম নিয়ে। বন্দিতা ভয় ভয় তাকায় স্বামীর দিকে। 

“তোমাকে কি আলাদা করে নিমন্ত্রন দিতে হবে?” মাথা নাড়ে সে। হঠাৎ বজ্রপাত হয় সামনের সুপুরী গাছটায়। বন্দিতা আতকে ওঠে। খুব ভয় তার বজ্রপাতে। তা কেন, সে জানেনা। শুধু মনে পরে গ্রামে হঠাৎ এরকম হলে তাকে বুকে টেনে নিত মা, মামীর কটাক্ষ অগ্রাহ্য করে। আবার বজ্রপাত হয় কিছুটা দূরে। কিছু না ভেবেই তার সরল মন খোঁজে মায়ের মতো আশ্রয়। দৌড়ে এসে দুটি ছোট হাতে জড়িয়ে ধরে সে অনিরুদ্ধ কে। অনিরুদ্ধ প্রথমে বোঝেনা তার কি করা উচিত। তার ভিজে শাড়ির স্পর্শে ভিজে যায় অনিরুদ্ধের পাঞ্জাবি। ভয় কাঁপে বন্দিতা। তার মাথায় হাত রাখে অনিরুদ্ধ, যেন তার মনের কথা বোঝে। কান্নায় ফুপিয়ে ওঠে আট বছরের শিশু। 
“আমার খুব ভয় করে বাজ পরলে।”
“ভয় কি, বোকা মেয়ে, তুমি তো বাড়িতে।” টেনে চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে যায় তাকে অনিরুদ্ধ। আবছা আলছায়ায় তার চোখ মুছিয়ে দেয় অনিরুদ্ধ। আবার তার পাঞ্জাবি আকড়ে ধরে বন্দিতা। 
“আমি তো আছি, ভয় নেই।” আশ্বাস দেয় অনিরুদ্ধ। সত্যি বলতে বন্দিতার আলিঙ্গনে তার অস্বস্তি বোধ হয়না। তার উপর দায়িত্ব বোধ বেড়ে যায়। তার মাথায় হাত বোলায় অনিরুদ্ধ। 
“আবার যদি বাজ পরে?” প্রশ্ন করে বন্দিতা।
“যখনই বাজ পড়ুক, আমার কাছে আসবে, দেখবে আর ভয় করবেনা।” তার কথায় যেন অবাক হয় মেয়েটা। “মাও আমায় তাই বলে, জানেন। মা কে না জড়িয়ে ঝড়ের রাতে ঘুমাতে পারতাম না আমি।” আবার কেঁদে ওঠে বন্দিতা। “এখন কে আমায় ধরে থাকবে মাঝরাতে বাজ পরলে? মায়ের কাছে নিয়ে চলুন না আমায়।” সরল মনে বলে সে। দেবীপুর যে রাত্রের মধ্যে পৌছানো যায়না তা সে জানবে কি করে? এক মাস আগে অষ্টমঙ্গলা করে আসা বৌমাকে যে ত্রিলোচন বাবু যেতে দেবেন না সেটাও তার জানার কথা না। 
“আমি থাকতে মা কে মনে করে কষ্ট পেতে হবেনা তোমায়।” আশ্বাস দেয় ফের অনিরুদ্ধ। “তুমি ঘুমালে আমি পাশ ছেড়ে যাবনা।”
“সত্যি? কথা দিন?” বন্দিতা যেন প্রাণ ফিরে পায়। 
“দিলাম।” হঠাৎ খেয়াল হয় বন্দিতার যে তার শাড়ী ভিজে, অনিরুদ্ধের পাঞ্জাবীতে জলের দাগ। জিভ কেটে মাথা নাড়ে সে। “এবাবা! আপনার পাঞ্জাবি ভিজে গেল যে।”
“ও কিছু না।”
“আপনি রেগে যাবেন না?”
“রাগব কেন? আমিও অনেক কিছুতে ভয় পেতাম ছোটবেলা।” তার কথা বিশ্বাসই হয়না বন্দিতার। মুখ টিপে হেসে বলে “যাঃ আপনি তো খুব সাহসী।” মৃদু হাসে অনিরুদ্ধ। 
“তাই বুঝি? কি করে জানলে?”
“বন্দিতা সব জানে।” নির্দ্বিধায় তার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে যায় বন্দিতা সেই অন্ধকারে। পাকা গিন্নির মতো স্বামীকে পরিষ্কার পাঞ্জাবি বের করে দেবে সে। 

বন্দিতার বয়েস যেবার সতেরো হওয়ার কথা, সেবার লক্ষীপুজোয় সারাদিন খাটনির পর শুয়ে পরে বন্দিতা। অনিরুদ্ধ পড়ার ঘরের বিছানায়। অনেক কাজ বাকি ছিল তার। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভাঙে অনিরুদ্ধের। মনে পরে কেমন ভয় পায়ে বন্দিতা এই বজ্র বিদ্যুতকে। তার মা বলেছিল এই ভয়ের জন্ম সেদিন, যেদিন এমনই এক রাতে সাপের কামড়ে তার বাবার প্রাণ যায়। অনিরুদ্ধ ছুটে যায় ঘরের দিকে। দেখে বন্দিতা তার বালিশ আঁকরে ধরে কাঁপছে, তার চোখ বন্ধ, তা ঘুমে না ভয় সে জানেনা। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম। সহজেই বুকে টেনে নেই তাকে অনিরুদ্ধ, যেমন ছোটবেলা ভয় পেলে ঘুম পারানোর জন্য নিত । বন্দিতা হঠাৎ কেমন শক্ত হয় যায়, যেন তার পরিচিত ছোয়া সে ভুলেই গেছিল। আসতে আসতে তার পাঞ্জাবীর পেছনটা আঁকরে ধরে সে। ভয় তার শ্বাস তীব্র। আলতো করে হাত রাখে অনিরুদ্ধ তার মাথায়। বোলাতে থাকে যেন না বলা আশ্বাস দিতে, “আমি আছি তো, ভয় কি, ঘুমাও ।” আরো জোরে জড়িয়ে ধরে তাকে বন্দিতা। তা কি ভয়? না কি এতদিন পর তাকে কাছে পাওয়ার আবেগে? হঠাৎ কেমন লাগে অনিরুদ্ধের। কোনদিন এমন লাগেনি তার আগে। যেন তার স্পর্শে খেয়াল করে সে, তার বন্দিতা এখন পূর্ণরূপে নারী। তার মুখ সামান্য নামে দেখার জন্য ঘুমিয়েছে নাকি সে, বাইরে তখনো বজ্রপাত চলেছে। অসময়ের বৃষ্টি যেন এসেছিল তারই জন্য। হঠাৎ বন্দিতার ম্লান মুখটা দেখে নিজেকে তার দোষী মনে হয়, অনিরুদ্ধের। আলতো করে নিজের ওষ্ঠে সে অনুভব করে বন্দিতার ললাটের উষ্ণতা। যেন নিজের অজান্তেই কোন মন্ত্রের বসে ঘটিয়েছে সে এই ঘটনা। বন্দিতার হৃদ স্পন্দন অনুভব করে সে, হঠাৎ সরিয়ে নেই নিজেকে, যেন কোন ঘোরতর অন্যায় করে ফেলেছে সে। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। বন্দিতা উঠে বসে খাটের উপর। তার ম্লান মুখে দেখা দেয় মৃদু হাসি। 

“বিহারী, খেতে দিয়ো, কলকাতা যাবার আছে।” শার্টের হাতটা গোটাতে গোটাতে অনিরুদ্ধ সকালে নেমে আসে খাওয়ার ঘরে। বন্দিতা চা দিচ্ছিল ত্রিলোচন রায় চৌধুরী কে। মুখ তুলে তাকায়না সে। অনিরুদ্ধ বুঝতে পারে না এর অর্থ। সে কি জানেনা সত্যি আগের রাতের কথা? নাকি সে জানে বলেই ক্ষুব্ধ? ক্ষমা চাইবে কি করে সে স্ত্রীর কাছে? 
“আজ্ঞে, মালিক…” ভয় ভয় বলল বিহারী, “আমায় যে বউরাণী হাট বাজার পাঠাচ্ছেন।” 
“একটা খাবার বাড়তে কতক্ষন সময় লাগবে তোমার?” ধমক দেয় অনিরুদ্ধ। 
“আমি দিচ্ছি, তুমি যাও বিহারী, হাট তো আর অন্যের জন্য বসে থাকবে না।” বলে ওঠে বন্দিতা। কিন্তু চোখ তার থালার দিকে। অনিরুদ্ধ বসে পরে। ত্রিলোচন একবার চেয়ে দেখে ছেলে বউয়ের দিকে, বুঝি আবার কোনো ঝগড়া বেঁধেছে, মানভঞ্জন চলছে তাদের। 
“কলকাতায় দু’দিন থাকতে হবে আমায় জ্যাঠামশাই।” 
“তা বেশ, জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছ?”শুধায় ত্রিলোচন। আড়চোখে তাকায় অনিরুদ্ধ বন্দিতার দিকে। 
“আমি খাবার বেড়ে গিয়ে করে দিচ্ছি।” বলে বন্দিতা। 
কোয়েলিকে সব বুঝিয়ে আসে সে শোবার ঘরে। অনিরুদ্ধর বাক্স বের করে পাট করে জামা রাখতে থাকে সে। ঘরে পরার চটিজোরার জন্য একটা খবরের কাগজের প্রয়োজন। তারিখ দেখে তুলে নেয় সে একটি অমৃতবাজারের পাতা। হঠাৎ চোখ পরে একটি বিজ্ঞাপনে। ফাউন্টেন পেনের। ভারী সুন্দর দেখতে। মোটা মোটা অক্ষরে লেখা তার দাম। উঠে যায়ে নিজের টাকা জমানোর বাক্সের দিকে। গুণে দেখে এত নেই তার। কাঁচি দিয়ে কেটে নেয় বিজ্ঞাপনটা। ভাবে যেদিন পয়সা জমবে, সেদিন সোমনাথকে এনে দিতে বলবে সে। হঠাৎ কোয়েলি ডাকতে আসে তাকে, তাই নিজের জমানো টাকার বাক্সটার নীচে কাটা পাতাটা গুজে বেরিয়ে যায় সে ঘর থেকে। অনিরুদ্ধ এই ফাঁকে ঘরে এসে ঢোকে। তার দৃষ্টি যায় কাটা বিজ্ঞাপনের দিকে। মৃদু হেসে সেটা পকেটে পুরে নেয় সে। বন্দিতা ঘরে ঢুকতেই ভারী ব্যস্ত দেখায় নিজেকে। তাকে একবার আড়চোখে দেখে অগ্রাহ্য করে বন্দিতা। বন্ধ করতে যায় বাক্স। কিন্তু বাক্স বন্ধ হয়না। জামাকাপড়ের ভারে ফুলে ফেঁপে ওঠে। বন্দিতা চেষ্টা চালিয়ে যায়। অনিরুদ্ধ হঠাৎ হাতের কাজটা রেখে তাকে দেখতে থাকে। সে সাহায্য় চায়না তাই অনিরুদ্ধ এগিয়ে আসেনা। বন্দিতা আপ্রাণ চেষ্টা করে, প্রথমে নিজের ভর দিয়ে তারপর বাক্সটির উপর উঠে বসে। হাসি পায়ে অনিরুদ্ধের কিন্তু সে হাসেনা। হাঁপিয়ে যায় বন্দিতা। হাল ছেড়ে দিতে যাবে এমন সময় এগিয়ে আসে অনিরুদ্ধ। বাক্স সে অনয়েসে বন্ধ করে নেয়। বন্দিতা প্রথমে সরে দাড়ায় তারপর চলে যায় ঘর থেকে। 

স্বামী ঘরে না থাকলে, যেমন কাজ অনেক কম তেমনি আবার দিনের শেষে একা লাগে তার। একা একা পড়ার অভ্যেস নেই বন্দিতার। মনে ঘুরপক খায় অসংখ প্রশ্ন। তা জিজ্ঞেস করবে কাকে? তাই স্বামী ঘরে থাকলে যা যা করে উঠতে পারেনা সেসব করে সে, ঘর গোছায়ে , খাতায়ে  মলাট দেয়, ছবিগুলো সব দেওয়াল থেকে নামিয়ে পরিষ্কার করে। হলঘরের  ঘড়িতে যখন ঢং ঢঙ্গিয়ে বাজে বারোটা, তখন একটা বাক্স চোখে পরে তার। ব্যারিস্টার বাবুর বাক্স। নিশ্চয়ই আবার কোন অদরকারী জিনিস সযত্নে তুলে রেখেছেন তিনি। খুলে ফেলে সে বাক্স। তার হাতে আসে খামে মোরা বিলিতি স্ট্যাম্প লাগানো কিছু চিঠি। কেমন কৌতুহল হয়, বিলেত থাকা অনিরুদ্ধকে জানার, তাই যা করা উচিত না সে করে ফেলে। খুলে ফেলে চিঠির ভাজ। কটি ঠাকুরপোদের, কটি শ্বশুরদের আর বেশিরভাগ ... পরী দিদির । সারারাত ধরে পড়ে সে চিঠিগুলো। যেন তার অনেক প্রশ্নের জবাব দেয় সেই অক্ষরগুলো। কেন সযত্নে রাখা এত বছর পরেও? বালিশে মুখ দিয়ে ফুপিয়ে ওঠে সে। কি করে ভালবাসবে অনিরুদ্ধ তাকে? সে যে মন প্রাণ দিয়ে এত বছর ভালবেসেছে পরী দিদিকে। এত বড় বলিদান দিয়েছে সে বন্দিতার প্রাণ বাঁচাতে? হঠাৎ যেন ভোরের আলোর সাথে সাথে তার জীবনের মূল্য ও অনিরুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা অনেকটা বেড়ে  যায় বন্দিতার কাছে। 

অনিরুদ্ধ যেদিন কলকাতা থেকে ফেরে, তার বাক্স থেকে সব গুছিয়ে রাখতে ঘরে ঢোকে বন্দিতা। 
একে একে জিনিস বের করে রাখে সে। তাকে চুপ দেখে নিজেই কথা বলে অনিরুদ্ধ।
“পড়াশুনা করলে?” মাথা নাড়ে সে, “আর বটুক করল?” আবার মাথা নেড়ে হ্যাঁ। অনিরুদ্ধর মুখে ভ্রূকুটি। কি হলো আবার। 
“এগুলো কি?” প্রশ্ন করে বন্দিতা। তার হাতে বেরিয়ে এসছে অনিরুদ্ধর বাক্সে  থাকা একটা প্যান্টালুনের পকেট থেকে দুটো গোলাপী কাগজ। 
“আরে!” হঠাৎ তার হাত থেকে সেগুলো নিয়ে নেয় অনিরুদ্ধ। “আর বলোনা! সে কি জোর করে নিয়ে গেলো মিনি থিয়েটার দেখতে।” বন্দিতার বুকটা হঠাৎ কেঁপে ওঠে। 
“বাহ বেশ, তাহলে আপনার উপর কারো জেদ চলে?” বাক্সের বাকি জিনিস নামাতে নামাতে বলল  বন্দিতা। 
“কেন? তোমার চলেনা?” 
“আমি জেদ করি না। অকারণে।” তার কথায় সায় দেয় অনিরুদ্ধ।
“একদিন নিয়ে যাবো তোমায় কলকাতা, থিয়েটারও দেখবো।”
 হঠাৎ কেমন লাগে বন্দিতার কথা গুলো, যেন দয়া করছে অনিরুদ্ধ তাকে। 
“আমার ওতে রুচি নেই।”
“না দেখলে জানবে কি করে যে নেই?” অনিরুদ্ধ প্রশ্ন করে। বন্দিতা চুপ। 
“ওইটা তোমার।” ব্রাউন পেপার প্যাকেটটা দেখিয়ে দেয় তাকে। বন্দিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকে দেখে প্যাকেটটা খুললে বেরিয়ে আসে সেই ফাউন্টেন পেন। 
“এটা কি?” কেমন অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করে বন্দিতা। 
“পেন, আনলাম তোমার জন্য।”
“আমি কি চেয়েছি আপনার থেকে?” হঠাৎ তার প্রশ্নে অবাক অনিরুদ্ধ। 
“তা তুমি না চাইলে আনবো না?” জিজ্ঞেস করে ভ্রূকুটি করে। 
“না আনবেন না, তারপর বলবেন বন্দিতা জেদ করে, জিনিস চায়।”
“কবে বলেছি আমি এরকম?” আশ্চর্য হয় অনিরুদ্ধ। 
“সে কোনদিন বলতেই পারেন, আমি তো আর ছোট নেই যে অমন প্রতিবার আপনি গেলে কিছু আনতে হবে।”
“আশ্চর্য তো!” হঠাৎ রেগে যায় অনিরুদ্ধ, “একটা জিনিস এনেছি, এত কথার কি হয়েছে? পছন্দ না হলে ফেলে দাও!” বন্দিতার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে বলে সে, দেখেনা বন্দিতার চোখ ছল ছল করে ওঠে। 
“আপনি পারবেন, যা পছন্দ না কিন্তু আপনার কাছে আছে, তা ফেলে দিতে?” জিজ্ঞেস করে সে। 
“পারব। কেউ কিছু দিলেই তা পছন্দ হবে তার তো মানে নেই।” তখনো রাগ কমেনি অনিরুদ্ধের স্বরে। হঠাৎ নূপুরের আওয়াজে তাকিয়ে দেখে সে, বন্দিতা দ্রুত পায়ে চলে গেছে ঘর থেকে। পেনটা পরে আছে বাক্সের উপর। কি হলো তার হঠাৎ? কেমন ভয় হয় অনিরুদ্ধের। সে কি তবে জেগে ছিল সেদিন রাতে? সে কি ক্ষুব্ধ? বড় হয়েছে এখন বন্দিতা, বুঝতে শিখেছে, হয়তো তাদের সম্পর্কটা স্বচ্ছন্দে মেনে নিতে পারছেনা সে? বসে পরে অনিরুদ্ধ চেয়ারে। তার দৃষ্টি ছবির দিকে। এ  কথা তো কোনদিন ভেবেই দেখেনি সে, যে বন্দিতার তাকে পছন্দ নাও হতে পারে? সে নিজে শিখিয়েছে বন্দিতাকে তর্ক করতে, প্রশ্ন করতে, এবং এও বলেছে বহুবার যে শৈশব ছিনিয়ে কোনো শিশু বড়দের মত হওয়ার আশা করাটা  মস্ত ভুল। তবে কি তাদের সম্পর্ককেও ভুল মানছে বন্দিতা?

বিয়ের হয়তো পাঁচ ছয় মাস পর, যখন জ্যাঠার কাছে সংসারের কাজ শিখছে সে, অনিরুদ্ধ বাঁধা  দিয়েছিল। তার বয়েস কি যে সে এসব করবে? ত্রিলোচন সেদিন বলেছিলেন, বন্দিতা তোমার স্ত্রী হতে পারে, সে এবাড়ির বউ, তাকে আমি কি শেখাবো সেটা তুমি বলে দেবে? তারপর থেকেই আস্তে আস্তে তার জিনিসপত্র, রান্নাবান্না সংসারের কাজে নিপুন হয় বন্দিতা। একদিন হঠাৎ তাদের ঘর থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ছুটে যায় সকলে। দেখে অনিরুদ্ধর বিদেশ থেকে আনা অতি প্রিয় পারফউমের শিশি ভেঙে ফেলেছে বন্দিতা। বকা খাওয়ার ভয় কান ধরে ক্ষমা চায় সে। সবাই ভেবেছিল অনিরুদ্ধ খুব রেগে যাবে স্ত্রীর উপর। সে মাথা নেড়ে  জিজ্ঞেস করে “তোমার লাগেনি তো?” 
“না। কিন্তু এটা আমি ইচ্ছা করে ফেলিনি, বিশ্বাস করুন ব্যারিস্ট্রা বাবু।” কান ধরে বলে বন্দিতা। তখন তার বয়েস হবে নয়। 
“ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়, ঠিক আছে বন্দিতা, আমি রেগে যাইনি।” সকলকে অবাক করে বলে অনিরুদ্ধ। সে হঠাৎ ভাবে নিজের মায়ের জিনিস ভাঙলে কি এমন ভয় পেতো বন্দিতা? নাকি অন্য সবার মতন শ্বশুরবাড়িতে অন্যরকম ভাবে থাকতে হয় সেটা সে জানে? 
“সে কি দাদা!” অবাক হয় বলে বটুক, “ওকে মারবেনা? আমায় যে মারলে সেদিন ল্যাম্প ভেঙে যাওয়াতে?”
“আহ, বটুক, চল পড়তে।” ধমকে নিয়ে যায় তাকে সোমনাথ। বন্দিতা তখনো ভয় ভয় দাঁড়িয়ে আছে। মামী হলে এতক্ষণে তাকে নির্ঘাত গাছের সাথে বেঁধে রাখতো , তা অনিরুদ্ধ মারলে আশ্চর্য কি?
কোয়েলি এসে ভাঙা কাঁচের টুকরো উঠিয়ে নেয় । বন্দিতা এসে দাঁড়ায়ে অনিরুদ্ধের সম্মুখে। 
“একটা প্রশ্ন করব?”
“করো।”
“আপনি যে বটুক কে মারলেন, আমায় মারবেন না? আমিও তো একই ভুল করেছি। মামি হলে এতক্ষণে... “
“তোমায় মারত খুব মামি?” কেমন অসন্তুষ্ট সুরে জিজ্ঞেস করে অনিরুদ্ধ। মাথা নাড়ে সে,
“মারত তো, বলতো আমাদের অন্ন  ধ্বংস করছিস মা মেয়েতে।”
তার সামনে বসে পরে অনিরুদ্ধ। হাটু গেড়ে বসেও যেন তার মাথার সমান দাড়ানো বন্দিতা। 
“আমি কোনদিন এমন বলবো না, মারবও না।”
“ভুল হলেও না?” অবাক হয় বন্দিতা। 
“না।”
“কেন?” বন্দিতা আশ্চর্য হয় “বটুক যে আমারই বয়েসী।”
“তুমি আর বটুক যে এক নয় আমার কাছে।” মৃদু হাসে অনিরুদ্ধ। কি করে বোঝাবে সে নির্বোধ শিশুটিকে তাদের সম্পর্ক?
“কেন?”
“সে আমার ভাই, তাকে আমি শাসন করি অন্যভাবে। তুমি যে..." থেমে যায় অনিরুদ্ধ। স্ত্রী কথাটা তার মুখ দিয়ে তেমন স্বচ্ছন্দে বেরোয় না তখনো। “তুমি তো আমার ..."
“অর্ধাঙ্গিনী?” স্ত্রীর মুখে সেই কথা শুনে হেসে ফেলে অনিরুদ্ধ,
“বাবাঃ কে শেখালো এমন কঠিন শব্দ?”
“জ্যাঠা শ্বশুরমশাই বলেন যে! আমরা সমান, তাই তো প্রশ্ন করেছিলাম কেন নাম নেব না আপনার? মা কেন বারণ করে তাহলে?” 
“কি বললেন?” হেসে প্রশ্ন করে অনিরুদ্ধ। 
“ধমক দিয়ে বললেন, বেশি প্রশ্ন করোনা বৌমা।” হাসতে হাসতে হঠাৎ কেন জানি লাফিয়ে ওঠে বন্দিতা। “ও মা, তার মানে......”
ভ্রু কুচকে তাকায়ে তার দিকে অনিরুদ্ধ। “আপনার ভুল হলেও আমি বকতে পারি, যেমন আপনি সবাইকে বকেন !” মুখ টিপে হাসে বন্দিতা। অনিরুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায় তার দিকে। 
“বেশি বাড়াবাড়ি করোনা।” তার ধমকে থমকে যায় বন্দিতা। তারপর হেসে ফেলে দুজনে। 

বন্দিতা হেঁসেলে এসে চোখ মুছে দাঁড়ায়ে। কি কান্ড করল সে? রেগে গেলো তেনার ওপর? দু’দিন ধরে যা যা ভেবেছিল সে, সব উল্টো করে ফেলল। উনি যা দেন তাতেই কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত তার। সে কিনা তার উপহার অস্বীকার করল। এত বড় আস্পর্ধা তার হলো কি করে? কোন অধিকারে সে রাগ করে অনিরুদ্ধর ওপর? তার ঋণ শোধ করতে যে আরও অনেক জন্ম নিতে হবে বন্দিতাকে। আসতে আসতে ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়ে সে। অনিরুদ্ধ চোখ তুলে দেখে। পেনটা  তুলে নেয়  হাতে, 
“আমি বটুকের উপর রেগে ছিলাম।” মিথ্যে কথা বলতে বন্দিতার আরও কষ্ট হয়। “তাই... “ হঠাৎ যেন প্রাণ ফিরে পায় অনিরুদ্ধ। যাক, তবে সেদিনের কথা না এটা। 
“ধন্যবাদ।”
“এটা দিয়ে পরীক্ষা দিও।” মৃদু হেসে বলে অনিরুদ্ধ। 
“আমি বলছিলাম, মানে... একবার দিদির সাথে দেখা করব।” ইতস্তত হয় বলে বন্দিতা।
“বেশ তো, কোয়েলি কে বলো না বৌঠানকে বিকেলে ডেকে দিতে, আমি তো কাজের ঘরে থাকবো।” 

সেদিন বিকেলে এসেছিল সম্পূর্ণা। সেই শেষ দেখা বোনের সাথে তার সাধ পূরণের পর। তার সব কথা শুনে অবাক সে। 
“আমরা জানতাম কি করে বিয়ে তা... “
“আমায় বলনি কেন?” প্রশ্ন করে বন্দিতা। 
“তুই যে অনেক ছোট ছিলি আর জামাইবাবু বললেন... “
“কে আপন তোমার? আমি না সে?”
“ওমা, এ কি কথা বন্দিতা?” ধমক দেয় সম্পূর্ণা। “তিনি তোর অভিভাবক।”
“এত বড় একটা বলিদান দিলেন উনি।” বন্দিতার চোখে জল, গলার স্বর কেঁপে উঠল। “তোমরা কেউ জানলে না?”
“উনি জানেন হয়তো, বলেননি আমায় কোনদিন।” বলল সম্পূর্ণা। “কিন্তু সেসব তো অতীত, তাই না?” ভয় ভয় প্রশ্ন করে সে বোনকে। বন্দিতা ম্লান হাসে। 
“জানিনে, উপন্যাসে পড়েছি, ভালোবাসা কখনো অতীত হয়না।”
“ওসব পড়িস কেন?” কেমন রেগে যায় সম্পূর্ণা। “তিনি তেমন লোক নন যে তোকে ছেড়ে দেবেন।”
“তা ছাড়বেন কেন দিদি? কিন্তু নিজের সমস্ত সুখ বিসর্জন দেবেন তা বলে আমার জন্য?” বন্দিতা চোখ মুছে বলে, “আর পরী দিদি? তার তো কোনো দোষ নেই।”
“সে উনি জমিদার মানুষ। বলতে নেই, চাইলে কি না পারে বল পুরুষ মানুষ। সে উনি চাইলে করবেন তাকে বিয়ে।” হঠাৎ কেমন হৃদপিন্ড কাঁপে বন্দিতার। “কিন্তু তুই তো বড় বউই থাকবি।”
সে জানে দিদি কেন বলছে সেসব কথা। এত বড় জমিদার বাড়ির বড় বউ হওয়ার যা সব অর্থনৈতিক সুবিধা তা দিদির স্বপ্নের বাইরে। কিন্তু বন্দিতা কি কোনদিন সেই সব চেয়েছিল? কি করে বোঝাবে সে দিদিকে তার মনের কথা? সম্পূর্ণা উঠে পরে, “তুই আবার কোন কান্ড ঘটাসনে যেচে পরে, বুঝেছিস?” সে মনে করিয়ে দেয় বোনটিকে। কিন্তু সম্পূর্ণাও জানে, বসে থাকার পাত্রী সে নয়। তার মনে যত প্রশ্ন তার উত্তর না পেয়ে থামবেনা সে। 




Comments

Popular posts from this blog

Swept Off!

Pratap was in his office the next day, in a light yellow shirt and blue pants, with a pile of files when the cycle ring made him look out of the window. Within 5minutes she was knocking on his chamber door. She walked in, in a frog printed long top paired with her jeans. " Sir..." " You don't need to, now everyone knows." " knows what?" She asked frowning. " Leave it, say..." " I need to leave around 2 today, Rohan's coming in the 5PM flight." She hid a smile. " So? What will you do from two? Dress up and wait for him?" His taunt had anger. " No, am going to pick them up!" She seemed excited. " What? Why? He can get a cab!" He shrugged. "Mahek doesn't ride cabs!" She copied Mahek's tone. " Ohh Mahek! Take my car!" " Excuse me?" She narrowed her eyes at him. " Gaddi leke jao, bechari ko tumhare choti si gaddi mein takleef hogi!...

Unsaid

" Keep the Lehenga in this one, that jewellery in the box." Jaivanta Bai was ordering around. Kunwar Shakti entered with an equally stunned Kunwar Pratap at the scene as the hall turned into a mini market thanks to their mothers. " Kunwar Pratap is here." Dheerbai smiled at the duo as she walked up to them. " Choti ma what are all these?" He asked. " Shagun!"Sajjabai answered excitedly."For Kuwaranisa. She will be blessed with these for the Sagaai. " " What Sagaai ?" "Your engagement , aree , no one told him?" Sajja was surprised. " The four of us are choosing separate gifts of our own choice for your bride, Kunwarsa come and see." Veer Bai urged.   " The sagaai is in three days, followed by the wedding on the seventh, Rajpurohitji had said," Dheerbai spoke up as Pratap stared right at his mother. She seemed happy. " What happened, Kunwar Pratap? Do you have doubts?" Dheerbai smiled sw...

You Deserve More

Ajabde woke up with the song of birds as she felt something warm clinging to her hand. Her eyes went wide. Her hand was on the pillow in between, between his hands, clasped as he slept. She thought of removing it slowly but he was holding it so tight. Ajabde's heart beat faster and faster. What do I do now? How do I not wake him? What if... why is my hand in his? She was utterly confused.   " Am I..." In love? Pratap was staring at the sleeping figure on his bed as he again looked back at the rain. Then he looked back frowning as she shivered. He closed the windows of the room, to make it cosy then sat on his side of the bed. A lamp flickered on her side like always and he stared at her sleeping figure as he put his blanket over her as well. She shifted a little in her sleep to make herself cosy again. Her payals and bangles made a rhythmic sound breaking the silence of the room. Her hand was out of her blanket and on the pillow in between. He tried to slowly put it in th...

Towards You

Kunwar Pratap and Ajabde were friends. He didn't feel awkward sharing his plans and thoughts with her anymore. She was more than happy to advise him on everything. She was happy he listened to her advice before taking or discarding them, be it on what to wear to Padmavati's Sagai or how to befriend the revolting Bhils. He loved the way Ajabde always used metaphors from Puranas and Ramayanas to explain the toughest things so easily. She expressed herself so well, so easily that it amazed him.   The Afghans were now led by Mehmood Shah. They have made secret territories in the forests and waited to attack. Rawatji and his spies had confirmed the news and Udai Singh had warned Mehmood Shah to withdraw his troops from Mewar in vain. Now, it was time they declared war. Mehmood Shah had limited resources in Mewar. And his spies clearly suggested that in no way could he win, especially with Kunwar Pratap leading his troops. He was having second thoughts about the war. One of his aides...

In Love??

Ajabde was bedridden over the next few weeks. She was too weak to sit up or do things on her own and the medicine men insisted she needed complete rest to heal. Kunwar Pratap insisted on staying by her side which Ajabde firmly refused. She didn't want to be a distraction from his work. That would break her vow, she said. Kunwar Pratap just smiled knowing she was so adamant and how smartly she convinced people. Ajabde was never bored though! The Queens and Princesses constantly came to check on her and keep her company. All except Dheerbai who only came once, when Ranaji visited her. Ajabde was getting better each day as the Vaid came to check on her and suggested it was time she could start leading a normal life again. Her wound still hurt a little and sometimes she felt dizzy due to the weakness but the Vaid said that too would go in two or three days. Ajabde was a fighter. Jaivanta Bai was proud when the Vaid said that Kunwaranisa had the strongest willpower he had ever seen.   K...

A Royal Affair

Jaivanta Bai was pacing her room as Sajja Bai sat confused. She was called in for some urgent meeting and yet the Maharani said nothing. She was lost in her thoughts. " Sajja Behen, you know what happened today between Dheerbai, Ajabde and Heer?" " No... I.... what's wrong Jija?" " I overheard Pratap and Shakti speak about Dheerbai having an altercation with Heer." " Ohh no... Jija..." Sajja Bai was clearly scared. Dheer was not a person to forgive and forget. " I fear she may try to break the relationship. After all, Heer is Bundi Princess. She is my blood and family. " " What should we do Jija?" " I have a plan." Heer's parents followed Jaivanta into Udai Singh's chamber. " Our Rajpurohit ji has said we need to do the sagaai within two days or else it will be stopped for six months and Ranaji we do not want to Wai till the Alwar war." Udai Singh looked confused. " Two days? B...

Life and You

" Maharanisa! Maharanisa!" The Daasi ran through the quiet Rani Mahal as Jaivanta Bai who was sitting in front of the Lord in her room ever since she was back, rushed out of her room followed by Sajjabai and Veerbai. " What happened?" She asked, her voice calm, but her heart thumping. " Kunwarsa is here... with Kunwarani... She... She...." The Daasi sobbed as Jaivanta Bai rushed to the room. She stood at the door as her eyes couldn't believe what she saw. Kunwar Pratap was soaked in her blood as he laid her down on the bed shouting " Jaldi. Rajvaidya..." His eyes stopped at the door as Jaivanta Bai rushed to be beside the unconscious Ajabde. The Daasis and Sevaks were running about soon enough. SajjaBai gasped at the scene. So much blood. Kunwar Pratap hadn't noticed anything except her calm unconscious face. Now he looked down at his blood-soaked hands, red, he stared at them as though in a trance. " Kunwar Pratap! Tell me what happ...

Secrets of the Hearts

Kunwar Pratap opened his eyes to catch a glimpse of Ajabde. She was sitting on the chair in front of the dressing table, filling her hairline with the sindoor. She looked freshly bathed and so serene in the light of the dawn, he stared with a smile meandering on his lips. He didn't get up or make her aware of his watchful eyes, but Ajabde seemed to feel it as she blushed slightly before putting on her dupatta and walking into the Puja Room without looking at him, although fully aware that his eyes followed her.   He dressed up as she finished her puja and he was heading out as she frowned. Usually, he waited to take her prasad and tell her the agenda for the day. He stopped at the door, aware of her confusion.   " I am going to Ranima, I will be back to take Prasad and my Dagger. " He smiled back as she nodded, keeping her Thaal as she went to place his dagger, sword and brooch right where he needed them to be. He stepped into Ranima's puja Ghar to find Hansa Bai and ...

Eternally Yours

Ajabde woke up to find neither the pillow nor the husband beside her. That was really unusual. Has she overslept? No, it was dark and the first birds were singing. She sat up to find that he had neatly arranged the pillows and made his side of the bed and put his blanket over her. She checked the changing room. No, he was not there, but unlike other days his clothes were not in a mess. She freshened up and reached the dressing table. His brooch was not there. Where is he? Has the war... Her heart skipped a beat. What if he had left and not even woken her up? " Daasi? Daasi?" She called as one of them walked in. " Ji Kuwaranisa?" " Where is Kunwarsa?" " He left early in the morning for Dangal and then a visit to the village. Do you need anything?" " No, You may go now." She put on the sindoor in a worry. Maybe something urgent has come up. She walked to the Puja room and was shocked. Her garlands were made, the Chandan was in place and ...

Dreams and Wishes

At dawn, the Bhil women took the girls to the Kalika Mata Temple and the Jal Kund. Dressed in white a nervous Heer followed everything Ajabde knew and did, trying to explain the significance of the rituals to her. They prayed to Lord Ganesh. Kunwar Shakti and Kunwar Pratap were staying at Punja Ji's place as they were not supposed to see the brides before the wedding. Ajabde was dressed in her mother's lehenga, a mang tika Jaivanta Bai gave her as a family heirloom and the simple nosering Pratap had gifted. They made their hair into a simple bun with wildflowers before putting on her dupatta. Heer was dressed in traditional Bhil jewellery of silver and beads that the women had gifted her. They made her wear a red and white saree draped as a lehenga and a red chunri with it. She looked like a pretty colourful Bhil bride. Kunwar Shakti was a nervous groom dressed in a traditional bhil dhoti, kurta and cap. The bhil shawl hung from a side, making the white attire colourful. K...