Skip to main content

Man Bhanjan

 

মানভঞ্জন 


অনিরুদ্ধকে যদি কেউ কোনদিন বলত যে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা ব্রাহ্ম সমাজের ও ইংরেজ সরকারের এক মস্ত ভুল, সে স্বদর্পে তার প্রতিবাদ জানাতে দ্বিধা বোধ করত না। সমাজের অনেক নিয়মকেই ভুল বলতে তার বাঁধে না। এমনকি একবার ব্রাহ্ম সমাজে দীক্ষিত হওয়ার ভাবনাও এসেছিল তার মনে। জমিদার বাড়ির কেউ নাকি গ্রামের কারুর অনুষ্ঠানে যায় না। খানিকটা জেদ করেই দেবদিত্যর বিয়েতে যেতে চেয়েছিল সে। তার প্রথম বিপ্লব সেটি। সেদিন নাকি দেবীপুর গ্রামে সমূহ বিবাহের আয়োজন। গরীব বাপেদের মঙ্গল হয় তাতে। অনেক খরচ বাঁচে। সম্পূর্ণার বাড়ি গরীব, তা দেবদিত্য আগেই বলেছে। এমন একটা অনুষ্ঠান দেখার ইচ্ছা অনিরুদ্ধের বহুদিনের। কিন্তু সেখানে গিয়েই তো দেখা বন্দিতার সাথে। নিজের ভাগ্য নিজের হাতে বদলায় সেদিন অনিরুদ্ধ। লোকে বলে সে নিজের জীবনে সর্বনাশ এনেছিল সেদিন। কিন্তু অনিরুদ্ধর ধারণা সে বন্দিতাকে উদ্ধার করেনি, বরং নিজের আলতা পরা ছোট্ট হাতে তার ঘর সামলে তাকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে বন্দিতা। কাউকে সে কোনদিন বলেনি সেই কথা। কেউ বুঝবেনা। বন্দিতাও না। স্ত্রীহীন সংসারে শ্রী এনেছিল সে। অনিরুদ্ধকে বারংবার আশ্বাস দিয়েছিল তার ভাবনা, তার জেদ আলাদা হলেও পাগলামি না, তার কথার পেছনের অর্থ আর কেউ না বুঝলেও আশ্চর্য ভাবে বুঝতো ছোট বন্দিতা। প্রথমে তাকে আশেপাশে দেখে, তার সিঁথির সিঁদুর দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করত সে। হয়তো তাই মাঝে মাঝে বড়মেজাজে কুকথাও বলেছে তাকে। কিন্তু অন্যদের মত তার ভয় চুপ থাকার মেয়ে সে নয়। প্রশ্ন করে সে, অনিরুদ্ধের ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেয় সে,যা আর কেউ করেনি কোনদিন। যে মায়ায় সে গোটা পরিবারকে বেঁধেছিল সেই মায়া থেকে বঞ্চিত থাকেনি অনিরুদ্ধ। তার তীব্র বুদ্ধির প্রশংসা করে সে, তার জানার ইচ্ছা, আগ্রহ ও পড়াশুনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে খানিকটা নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে তার মধ্যে ব্যারিস্টার অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। গুরু শিক্ষকের সম্পর্ক থেকে শুরু হয়ে , স্নেহের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। তখনই হয় সেই কান্ড। একদিকে তার মাসিক শুরুর প্রায় সাথে সাথে সত্যনারায়ণ পুজো করায় জ্যাঠামশাই আর তার সাথে শুরু হয় পাড়া পড়শীদের কথা। বন্দিতা নাবালক, শিশু। তার মন, দেহ কোনটাই যোগ্য হয়নি স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। কাকে কাকে বোঝাবে সে সেসব কথা? একদিকে বন্দিতার থেকে দূরে থাকা বড় কঠিন। সে কষ্ট পায়, তা অনিরুদ্ধের অজানা নয়। কিন্তু কি বলবে তাকে? তার ভালোবাসা বোঝার মতন পরিপক্কতা হয়নি তার। 


অনিরুদ্ধ এসব কাকে বলে? হঠাৎ যে অপরাধ বোধ নিয়ে সে সৌদামিনীকে সাহায্য় করত তা মুছে দেয় স্বয়ং সৌদামিনী। বন্ধু হয় ওঠে তার। অনিরুদ্ধ আজ অপরিণত বয়েসের ভুলের কথা বুঝতে পারে। সে যাকে ভালোবাসা ভেবেছিল তা ছিল অভ্যেস। তার অপরাধ বোধ যত কাটে আরও যেন তীব্র হয় বন্দিতার প্রতি তার আবেগ। কিন্তু কোনো ভুল করতে চায়না সে। বন্দিতা কি বুঝেছিল সে জানেনা কিন্তু মনে মনে ভাবে যেদিন সে বুঝবে যে বন্দিতার তাদের সম্পর্কের জটিলতা বোঝার বয়েস হয়েছে সেদিন সব কথা খুলে বলবে সে স্ত্রী কে। এখন তার অপেক্ষার দিন, বন্দিতার স্বপ্ন পূরণের দায়ীত্ব তার কাঁধে। অনেক বড় হবে সে, মেয়েদের পথ দেখাবে, এইটুকু স্বপ্ন অনিরুদ্ধের। 


বন্দিতার বয়েস তখন পনেরো যখন সোমনাথের বিয়ের কথা ওঠে বাড়িতে। একদিন কাছে থাকা এক দুঃসম্পর্কের জ্যাঠা আসেন ত্রিলোচন বাবুর সঙ্গে দেখা করতে। প্রস্তাব দেন সোমনাথের জন্য মেয়ে খোঁজার। বন্দিতা ঘোমটা টেনে চা নিয়ে গিয়ে প্রণাম করে তাকে। খানিকটা অগ্রাহ্য করেই বলেন তিনি ত্রিলোচনকে “বুঝলে ভাই, জমিদার বাড়ির ছেলের জন্য মেয়ে খোঁজা ভারী ঝক্কির। যাকে তাকে তো বউ করে আনা যায়না ।” ত্রিলোচন ভালো করে বুঝতে পারে তিনি কি ইঙ্গিত করছেন। “তাই বলছিলুম আরকি।”

“ঠিক কথা, বুঝলে বৌমা?” ত্রিলোচনের কথায় থেমে দাঁড়ায়ে বন্দিতা, আগন্তুকের মুখে ভ্রুকুটি। 

“তা বেশ তো, তোমার ঠাকুরপোর বউ, তুমিই দেখে, শিখিয়ে পড়িয়ে নিও।” বন্দিতার মনে অনেক প্রশ্ন, কি করে দেখবে শুনবে সে? কিন্তু সামনে অতিথি। মনে থাকবে তো তার সব প্রশ্নগুলো?

“তুমিই তো ভালো চেনো ওদের, সোমনাথের পছন্দও জানো।” মাথা নাড়ে সে। 

অনিরুদ্ধ বাড়ি এলে, জলের আগেও তার সম্মুখে আসে প্রশ্নবান। 

“বউ দেখতে গেলে কি দেখে শুনে নিতে হয়?” বিষম খেতে গিয়ে সামলায়ে সে। 

“কি?” চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে স্ত্রী কে। 

“ওই যে বললেন শ্বশুর মশাই।” মহা চিন্তায় বসে পরে সে খাটের কোণে, অনিরুদ্ধ আড়চোখে দেখে তাকে, “বললেন সোমনাথের বউকে  শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে তুমি।” অনিরুদ্ধর হাত থেমে যায়ে তার কথাতে, “কি? সোমনাথের বউ?”

“আরে নাহলে বলছি কি আমি!” হঠাৎ কেমন উত্তেজিত হয় বন্দিতা। “বাড়িতে বিয়ে লাগবে, নতুন গয়না, কাপড়, অনেক অনেক মিষ্টি।” চোখ উজ্জল তার। 

“আর পড়াশুনায় ফাঁকি দেবার অজুহাত?” ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে সে, “সেটাই তো আসল, তাই না?”

“উফ!” মাথা নাড়ে বন্দিতা। “কোথায় ভাবলুম আপনি শুনে খুশি হবেন, এমন হেডমাস্টারের মত স্বভাব আপনার বড়ই বাজে।” নালিশ করে সে। ঘড়ি খুলতে খুলতে উপদেশ দেয় অনিরুদ্ধ। এখন খুশি হওয়ার কোনও কারণ ঘটেনি। আগে মেয়ে দেখবে, পছন্দ হবে, পরিবার পছন্দ হবে, তারপর বিয়ের কথা, আয়োজন সে অনেক পরের ব্যাপার। মনমরা হয় বন্দিতা। এত কিছু সে ভাবেইনি। 

“বলছি এখুনি সোমনাথকে বলার দরকার নেই।” অনিরুদ্ধের কথায় মাথা নাড়ে সে। তারপর আসতে আসতে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। নূপুরের আওয়াজ মৃদু হতে, চোখ তুলে তাকায়ে অনিরুদ্ধ। বুঝি এ বছর মণ্ডা মিঠাই না পাওয়ার দুঃখটা অনেক। 


বিকেলে কাপড়ের আঁচলে হাত মুছতে মুছতে যখন ঘরে আসে সে, অনিরুদ্ধ তার স্কুলের কাজ দেখছে। না বলা সত্ত্বেও এক নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে তাদের মধ্যে সব কিছু। তাকে পড়িয়ে নিজের কাজ ধরবে অনিরুদ্ধ, সে ঘুমিয়ে পরলে কিংবা ঘুমানোর ভান করলে, বেরিয়ে যাবে সে দরজা ভেজিয়ে পড়ার ঘরে, শুতে। আবার সকলের আলো আসতে না আসতে ফেরত আসবে ঘরে। অনিরুদ্ধ নিজের স্থান খাটের এক পাশে গ্রহণ করলেই উঠে পরে বন্দিতা, সংসারের কাজ সেরে স্কুলে যায় সে। দুজনের এমন ভাব যেন অপরজন তার এই গোপন কথা জানেনা। কিন্তু এর ফলেই তো সব পাড়াপড়শীদের জল্পনা কল্পনা।

“ওই  দেখো কি এনেছি তোমার জন্য, সবাইকে বিলিয়ে দিও না।” খাটের পাশে রাখা একটি বাক্সের দিকে ইঙ্গিত করে অনিরুদ্ধ। বন্দিতা উঠিয়ে নেই সেটা। বিলিতি চকলেট। 

“ওমা, খুব মিষ্টি জিনিস খেতে ইচ্ছা করছিল।” বলে ওঠে এক গাল হেসে বন্দিতা। 

“জানি।”

“কি করে জানলেন? আমি তো বলিনি।” উত্তর আসে না। বোধহয় অন্যমনস্ক। বন্দিতা একটা চকলেট রাঙতা খুলে মুখে দেয়। 

“তা কাকে বিলবো? বটুককে কি বলি আমি আপনি যা যা আনেন সব?”

“তোমার বিলোবার লোকের কমতি নেই।” অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় “নাও  এবার ভূগোলটা পড়ো ।”


একদিন অনিরুদ্ধ সবে এসে বসেছে হাত মুখ ধুয়ে, বিহারী জল খাবার রেখে গেছে তার সম্মুখে এমন সময় পরিচিত নূপুরের শব্দ কানে আসে তার। খুব আস্তে আস্তে ঘরের দিকে আসছে বন্দিতা। অনিরুদ্ধ ভ্রূকুটি নিয়ে তাকায় দরজার দিকে। পর্দা সরিয়ে চোখাচোখি হতেই কেমন অপ্রস্তুত বোধ করে বন্দিতা, পেছনে ফিরে মুচকি হেসে ডেকে নেয় ঘরে বটুককে। দুজনে এভাবে ঘরে ঢোকার মানে  জানে অনিরুদ্ধ। না হয় তাদের কোন কান্ড ঘটানোর পর বকুনি থেকে বাচাঁতে হবে তাকে, নয় কিছু চাই। অপেক্ষা করতে হয়না তাকে, 

“এইটা দেখুন।” আঁচলের তলা থেকে বের করে বন্দিতা একটা বই। বইটা সোমনাথের কলেজের তা বুঝতে অসুবিধা হয়না অনিরুদ্ধের। কলেজ স্ট্রীট থেকে নিজেই এনেছিল সে। বটুক ভয় ভয় একবার বলে “ছাড় না, বৌঠান। বড়দাদাকে কেন আবার.. ” অনিরুদ্ধ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় স্ত্রীয়ের দিকে, “হঠাৎ সোমনাথের বই পড়ার ইচ্ছা হল তোমার?” মাথায় করাঘাত করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বন্দিতা। বটুক হাসে। তারপর দাদার রাগী দৃষ্টিতে চুপ করে যায়। 

“উফ, আপনি না!” পাকা গিন্নির মতো মাথা নেড়ে চাবি বাঁধা আঁচল ঠিক করে বন্দিতা। “ভেতরে দেখুন।” অনিরুদ্ধ পাতা ওলটায়। পাতার ভাজ থেকে বেরিয়ে আসে একটা ছবি। অস্পষ্ট ছবি, ষোল সতেরো বছরের একটি মেয়ের। “এটা কে?”

“আমার বৌদি।” বটুক মাথা নাড়ে। 

“কি?!” চেয়ার ছেড়ে উঠে পরে অনিরুদ্ধ। বটুক হাসে, “সোম দাদার সম্বন্ধ এসেছে এর সাথে।” বলে বন্দিতা। 

“ওহ তাই .. “ অনিরুদ্ধ আবার বসে পরে, বন্দিতা ভ্রূকুটি নিয়ে তাকায় তার দিকে, “আপনি কি ভাবলেন?”

“না মানে, আমি তো কিছুই জানিনা.. ” মাথা নাড়ে স্ত্রীয়ের দিকে অনিরুদ্ধ। 

“চিন্তা করবেননা দাদা, আপনাকে বলছিনা, আমার ঘাড়ে কটা মাথা আছে?” বৌদির দিকে তাকায় বটুক। আরচক্ষে তাদের দেখে অনিরুদ্ধ। বটুক জানে এই সঠিক সময় পালানোর। তারপর দাদার কাছে গাট্টা খাবে না বৌদির কাছে কিল তা কে বলতে পারে?

“আপনার একটা কাজ আছে।” বন্দিতা ছবিটা হাতে নিয়ে বলে। “বুঝতেই পারছেন বড়ঠাকুরপোর পছন্দ হয়েছে”

“তাই বুঝি?” অনিরুদ্ধ কেমন ঠাট্টার সুরে বলে, “তুমি কি করে জানলে?”

“আমি সব জানি। তাই তো জ্যাঠাশ্বশুরমসাই আমায় বললেন, বৌমা সোমনাথের মনের কথা তা তুমিই জানবে।”

“আর অমনি উনি কাজকম্ম  পড়াশুনা ফেলে ছুটলেন।" অনিরুদ্ধের কথায় কান দেয়না বন্দিতা। 

“এখন আপনাকে যেটা করতে হবে, একটু খোঁজ করুন না কেমন মেয়ে।”

“আমি পুলিশ নয়, ব্যারিস্টার, বন্দিতা। আমি কি করে.. ?” অবাক হয় অনিরুদ্ধ। 

“এই পৃথিবীতে এমন কাজ নেই যা আপনি চাইলে পারেন না।” স্বগর্বে বলে বন্দিতা। 

“তাই বুঝি?” হাসে অনিরুদ্ধ। “এত বিশ্বাস কেন তোমার আমার উপর?” বন্দিতার ইচ্ছা হয় সে বলে, যে সে সত্যিটা জানে, তাই অনিরুদ্ধ কি করতে পারে তা নিয়ে তার কোন সঙ্কোচ নেই। কিন্তু সে সত্যিটা জানে জানলে কি খুশি হবে অনিরুদ্ধ?

“এত বুঝিনা, আপনার ভাই, আপনি যাচাই করবেন। ব্যাস। আমার দায়িত্ব আমি বললাম।” হাত মুছে চলে যায় বন্দিতা। অনিরুদ্ধ স্থির করে এই কাজটা সে সৌদামিনীকে দেবে। 


কিছুদিন পর, সৌদামিনী চিঠিতে জানায় যে মেয়েটির বয়েস ষোল নয়, তেরো। জমিদার বাড়ির সম্বন্ধের লোভে তার বাবা বয়েস বাড়িয়ে বলেছেন, অনেক দেনা ভদ্রলোকের। রেসের মাঠে যাওয়া আসা আছে।  অনিরুদ্ধ ভাবে এই খবরটা তার নিজেরই দেওয়া উচিত সোমনাথকে। সেদিন বাড়ি ফিরে ডেকে পাঠায় ছোট ভাইকে ঘরে। তাকে চিঠিটা পড়তে দেয়। অনিরুদ্ধ ভাবে সোমনাথের মনে প্রশ্ন থাকবে, কিন্তু সে চিঠি পড়ে কিছুই জিজ্ঞেস করেনা, শুধু বলে “জ্যাঠামশইকে জানিয়ে দেবেন।” মাথা নাড়ে অনিরুদ্ধ। বন্দিতা ঘরে আসে তখন। তাকে হাতে চিঠি দিয়ে অনিরুদ্ধ চলে যায় জ্যাঠামশাইয়ের ঘরে, সম্বন্ধ নাকচ করতে। সত্যি বলতে ছবি দেখে বেশ পছন্দ হয়েছিল বন্দিতার মেয়েটাকে কিন্তু তার থেকে বেশি কে জানে যে বাল্য বিবাহ কতটা অনুচিত। তার প্রথম কদিনের কথা ভেবে এখন ভয় হয়। ব্যারিস্ট্রা বাবু না থাকলে যে কি হত তার। 


বন্দিতা যেদিন প্রথম পা রাখে রায় চৌধুরী বাড়িতে, সেদিন অত বড় বাড়ি দেখে গোলক ধাঁধার মতো লেগেছিল বুঝি তার; এত ঘর এত লোক, বাড়ির লোকের থেকে তো বাইরের লোকের বেশি আনাগোনা। এরা নাকি সবাই কাজ করে রায় চৌধুরী বাড়িতে। বলেন কি বিহারী বাবু? সে বোঝেনি তার শ্বশুরমশাইরা কেন অসন্তুষ্ট, কিন্তু এটা বুঝেছিল যে সেই গোটা বাড়িতে যেন তার নতুন পাওয়া স্বামীটিই তার একমাত্র আপনজন। তিনি ছাড়া কেউ যেন দেখেইনি তাকে গৃহে প্রবেশ করতে। কেউ তার নাম জানতে চায়নি, পরিচয় দেয়নি নিজেদের, কিন্তু বন্দিতা বুদ্ধিমতি। সে বুঝেছিল, বয়েসে প্রৌঢ়রা হলেন শ্বশুরমশাই, অন্য দুজন তার স্বামীর ভাই। কিন্তু শাশুড়ি কই? দিদি বোন বলে ডাকারও কেউ নেই। বিহারী বাবু জানিয়েছিলেন গিন্নিমা মারা গেছেন তা বেশ কয়েক বছর হলো। হঠাৎ যেন পিতৃহীন বন্দিতা প্রথমবার নিজের সাথে নতুন পাওয়া স্বামীর কোনো মিল খুঁজে পেল। 


“ওকে ঘরে নিয়ে যাও বিহারী।” হঠাৎ ঝগড়া ঝাটির মাঝেই বলে ওঠে অনিরুদ্ধ। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল সে এতক্ষণ সবার দিকে। 

“কোন ঘরে?” জিজ্ঞেস করে বসে বিহারী। অনিরুদ্ধ চুপ করে থাকে। 

“তা যে বিয়ে করে এনেছে তারই ঘরে হবে।” রাগের মাথায় বলে ওঠে ত্রিলোচন বাবু। বিহারীর সাথে সে ঘরে চলে যাওয়ার সাথে সাথে যেন দাদাকেই বলে বিনয়, “বলছিলাম যে, নাবালিকা কিনা, ওর ঘরে থাকবে?” ত্রিলোচনের তিক্ত দৃষ্টিতে থেমে যান তিনি। 

“হ্যাঁ থাকবে, যার দায়িত্ব সেই সামলাক, বুঝুক সে, কি ভুলটাই না করেছে!” চলে যায় ত্রিলোচন বাবু, বিনয় তার পেছনে, সবিনয় বোঝাতে, যে অনিরুদ্ধ মেয়েটা কে এরকম করে বাঁচিয়ে ভুল করেছে ঠিকই কিন্তু স্ত্রী মানেনা সে মেয়েটাকে। মানতে পারেনা। সে যে শিশু। 

“সিঁথির সিঁদুর ছেলেখেলা নয় বিনয়।” শেষবারের মত জানিয়ে দেয় ত্রিলোচন। “আমরা না মানলেও সে অনিরুদ্ধের স্ত্রী, এই বাড়ির বড় বউ। আমরা বড় হই। আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। বৌঠান থাকলে আজ তাকে বুকে জড়িয়ে নিতেন। সে কথা তুমি জানোনা? তার অবর্তমানে তার সব দায়িত্ব পালন করব আমি।” ত্রিলোচনের কথার উপর রায় চৌধুরী বাড়িতে কেউ কথা বলেনা। তিনি এই মাতৃহীন ছেলেদের মানুষ করেছেন, তাই তার কথা শেষ কথা। 

“মেয়েটাকে শিখিয়ে পড়িয়ে  নিতে হবে, যা হবার তা তো... “ থেমে যান ত্রিলোচন। দরজায়ে এসে দাঁড়ায়ে অনিরুদ্ধ। তার মুখে কিন্তু কিন্তু ভাব। তাকে দেখে খানিকটা বিরক্ত প্রকাশ করে চলে যান বিনয়। সে এসে বসে জ্যাঠার আরাম কেদারার সামনে মেঝেতে, পায়ের সামনে। 

“আমার সত্যি কোন উপায় ছিলোনা, বিশ্বাস করুন।”কেঁদে ওঠে সে। তার মাথায় হাত রেখেছিল সেদিন ত্রিলোচন।

“পারবে তো? এই সম্পর্কের মর্যাদা দিতে?” প্রশ্ন করেন তিনি। অনিরুদ্ধ চোখ মোছে, “কিন্তু আমি যে..."

“সে আজ থেকে তোমার স্ত্রী, তার ভালো মন্দের দায়িত্ব তোমার।” মাথা নেড়ে সায় দেয় অনিরুদ্ধ।

“পারব। তাকে কোনদিন বুঝতে দেবনা যে আমাদের সম্পর্কের শুরুটা অন্য পাঁচটা সংসারের মতন নয়।”

“ এই সংসারে অনেকদিন পর মা লক্ষী এসছেন অনিরুদ্ধ, তার যেন অসম্মান না হয়, দেখো।” জ্যাঠার কথায় চোখ তুলে তাকায়ে অনিরুদ্ধ। কিছুক্ষণ আগে ইনিই তো তীব্র প্রতিবাদ করছিলেন। 

“কথা দিলাম।” অনিরুদ্ধ মৃদু হাসে; সে জানে তার জ্যাঠা শক্ত জমিদার হলেও, তেমনি নরম অবিভাবক। 

“কাল যা যা আচার নিয়ম পালন করার, সব করো, এখন যাও।” উঠে পরে সে।  


ঘরে এসে দেখে, তার ঘরের মেঝেতে খোলা ছেঁড়া শাড়ির একটা পটলা, তার থেকে বের হয়েছে অনেক খেলনা, কয়েকটা শাড়ী ও চিরুনি, ফিতে, চুড়ি এসব মেয়েদের সাজার জিনিস। যে এসব ঘিরে বসে আছে, সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিরুদ্ধের দিকে। খানিকটা স্বাভাবিক নরম সুরে শুধোয় অনিরুদ্ধ, “এসব কি?”
“ ওই বাবু যে বললেন এই ঘরে থাকবো, তাই জিনিস বের করছিলাম।” কেমন ভয় ভয় বলে মেয়েটা “মা বলেছিল নিজের জিনিস নিজে গুছিয়ে রাখতে, কিন্তু আমি তো পারিনে।” হেসে ফেলে অনিরুদ্ধ, উবু হয় বসে তার সামনে, “আমি কোয়েলি কে বলে দেব কাল, সব সাজিয়ে দেবে। ঠিক আছে?” মাথা নাড়ে সে। 

“কোয়েলি কে?” প্রথম প্রশ্ন করে মেয়েটা। 

“আমাদের বাড়িতে কাজ করে, তোমায় সব দেখিয়ে দেবে সে। এবার …” চারদিকে তাকায়ে অনিরুদ্ধ, “তুমি এক কাজ করো, ওই খাটটায় শুয়ে পরো, আমি..."

“আর খাবার ?” কেমন বিরক্ত হয় বলে মেয়েটি, “খেতে দেবেন না আমায়?” সত্যি বলতে এমন ঝড় বয়ে গেছে সেদিন যে অনিরুদ্ধের মনেই নেই সে কথা। 

“ওঃ ..." খানিক অপ্রস্তুত হয় সে, “দাঁড়াও” সে ডাকে বিহারীকে, খাবার আসে কাঁসার থালায় নতুন বউয়ের জন্য। বিস্ময়কর চোখে দেখে সে, এত খাবার, এমন পাত পেড়ে খেতে দেওয়া কোনদিন দেখেনি সে। তাকে তো মামি শাল পাতায় মুড়ে যা বাড়তি পরে থাকতো তাই খেতে দিত। দিদি মাঝে মাঝে লুকিয়ে ভালো জিনিস এনে দিলে সেটাও রোজ না। 

“যতটা পারবে, খাও।” বলে অনিরুদ্ধ, যেন পড়তে পারে তার মনের কথা। “নাম কি তোমার?”

হঠাৎ হেসে ওঠে মেয়েটি। হাসিতে মাথার ঘোমটা পরে যায় তার, খেয়াল থাকেনা সেদিকে, “সে কি, বে করে এনেছেন আর নাম জানেন না?”

“তুমি জানো আমার নাম?” হঠাৎ যেন কেমন ক্ষুব্ধ সুর অনিরুদ্ধের। ভয় হাসি থেমে যায় মেয়েটির। কিন্তু দৃষ্টিতে দুষ্টুমীর ছাপ। 

“ও মা, মা যে বলে আপনার নাম নিতে মানা আছে, আপনি ভগবান।” 

“আমি ভগবান?” মাথা নাড়ে অনিরুদ্ধ, বসে পরে তার সামনে বাবু হয়ে, মেয়েটি খেতে শুরু করে তার চোখের ঈশারা বুঝে, “তা কেন?”

“আমি কি করে জানব?” আশ্চর্য হয় বলে সে। “ মা বলেছে, মা কি কখনো মিথ্যে বলে?”

“তাহলে আমি আজ একটা কথা বলছি, মন দিয়ে শোনো।” খাওয়া থেমে যায় তার, তাকায়ে অনিরুদ্ধের দিকে হ্যাঁ বলে, 

“কোনদিন বিনা প্রশ্নে কারুর কথা মানবেনা। প্রশ্ন করবে, যতবার ইচ্ছা, যা মনে হবে, সব প্রশ্ন করবে, যদি মনের মত উত্তর পাও তবেই বিশ্বাস করবে।” চোখ ছল ছল করে ওঠে মেয়েটার। 

“আমি তো করতাম প্রশ্ন, মামী মারতে যে! যদি কেউ মারে?”

“কেউ মারবেনা, আর বকলে বলবে অনিরুদ্ধ বলেছে। সেটাই নাম আমার।”

“অনিরুদ্ধ।” বিড়বিড় করে বলে মেয়েটা। তাকায়ে তার দিকে, যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেনা। “মা যে বললে... "

“আমার সব কথা শুনতে বলেননি মা?” অনিরুদ্ধের প্রশ্নে থেমে যায় সে। মাথা নাড়ে। 

“কিন্তু, আপনি যে বয়েসে বড়, বড়দের যে নাম নিতে নেই। অসম্মান হয়। আপনার সম্মান করতে বলেছে মা।” আট বছরের শিশুটির মুখে এমন তর্ক প্রত্যাশিত না অনিরুদ্ধের কাছে। বটুক তারই বয়েসী । দাদার যে কোন কথার উপর কথা বলার সাহস তার নেই। এই মেয়েটি কি তবে অন্যরকম? 

“নাম কি তোমার?” আবার প্রশ্ন করে অনিরুদ্ধ। 

“বন্দিতা।” মৃদু হেসে বলে সে, তার সামনের একটি দাঁত ওঠেনি এখনও, সবে পরেছে বোধ হয়। হঠাৎ কেমন মায়া লাগে অনিরুদ্ধের। দুধের দাঁত পরেনি যাদের, সিঁথির সিঁদুরের সম্পর্ক বোঝাতে চায় তাদের, এ কেমন সমাজ?

“বন্দিতা।” হেসে বলে অনিরুদ্ধ। “ ভালো নাম। আচ্ছা, তোমার কথা মানলাম। তাহলে তুমি আমায়... “ খানিক ভেবে নেয় অনিরুদ্ধ। “ব্যারিস্টার বাবু বোলো?”

“সেটা আবার কি?” চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করে বন্দিতা। 

“ধরে নাও আমার আর একটা নাম।”

“ব্যারিস্ট্রা বাবু?” তার উচ্চারণে সেদিন হাসে অনিরুদ্ধ। কিন্তু যেদিন বন্দিতা স্কুল থেকে এসে তাকে সঠিক সম্বোধন করে, কেমন খারাপ লেগেছিল তার। 

“তুমি ব্যারিস্ট্রাবাবুই বোলো।” বলেছিল সে, “ওটাই ভালো, সবার থেকে আলাদা।” দশ বছরের মেয়েটা মাথা নেড়েছিল বিজ্ঞের মতন। 


খাওয়ার শেষে যখন তাকে বিছানা দেখিয়ে নিজের বালিশ নিয়ে বেরিয়ে যেতে যায় অনিরুদ্ধ, হঠাৎ তার পাঞ্জাবীর কোণা চেপে ধরে বন্দিতা। যত অনায়সে সে সেটা করে, ততই যেন ইতস্তত অনিরুদ্ধর। 

“আমি যে একা শুতে পারিনা, মা শোয়ে আমার সাথে। অন্ধকারে ভয় লাগে আমার।” অনিরুদ্ধ ভাবে। কাকে ডাকবে সে বন্দিতার সাথে শুতে ? বাড়িতে কোনো ঝি থাকেনা রাতে। “আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও আমি আছি।” সে মনে মনে স্থির করে যে বন্দিতা ঘুমিয়ে গেলে পাশের পড়ার ঘরে গিয়ে শোবে সে। কিন্তু বন্দিতা যে তার পাঞ্জাবীর কোণটা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে ঘুমায়। নতুন স্থান, অচেনা মুখের মাঝে সে যেন তার একমাত্র সম্বল। তার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেও বেশি মায়া হয় সেদিন অনিরুদ্ধের। তারপর থেকে রোজই এমনটা হয়, তার পাঞ্জাবীর কোণ  ধরে ঘুমায় বন্দিতা। ধীরে ধীরে তার পাশে ঘুমানোরই অভ্যেস হয়ে যায় অনিরুদ্ধর।

All Chapters/ English




Comments

Popular posts from this blog

Of Faith and Fate

Series Announcement! Historical Fictions are special, so here is one, short but special tale close to my heart after a really long time! This story is a special one because it is completely historical fiction with very little connection to the fan fiction I have written previously. However, I have maintained the sequence of events, reading history books on the context.  This is not a story of a man and a woman, their love and trust. This one is about the tests time often puts people through, forcing them to change. My protagonists in this one are hence, two princesses of the same age. Ajabdeh Punwar or Ajbante Kanwar Baisa, as she is locally called is the princess of a very significant district of Bijolia in Mewar. Bijolia lies in the seat of political events, at the border of Bundi and Mewar. Having her lineage from the mighty Chauhans, her forefathers once ruled Mewar. Her father is an officer in the army of Mewar under Rana Udai Singh and she is a lady of princip...

Preparation

It has been a tradition since time immemorial in the face of the earth that the men marched to war, seeking glory for their states and kings, adorning their bodies with bruises no less gaudy than the most precious gems of the land, while the women waited and prayed for their safe return. No war was easy or certain. At least that is what they grew up learning. But does it stop the war? Or the need for power? Absolutely not. The royal blood demands shedding it. Kumar Viraj could have left Maanwari as a child but Maanwari had not left his veins. That was perhaps why he was braver and more skilful than men his age. When Adhiraja Ishaan Dev offered him Neelambargarh’s mighty troops to capture Maanwari, he knew they would surely outnumber his uncle’s one by hundreds. But he made sure he refused Adhiraja's personal help. Battles made Ishaan Dev’s adrenaline rush. He wanted to lead Kumar Viraj to victory. But when Kumar Viraj said that it would only demean his claim to be ready for the thr...

Eternally Yours

Ajabde woke up to find neither the pillow nor the husband beside her. That was really unusual. Has she overslept? No, it was dark and the first birds were singing. She sat up to find that he had neatly arranged the pillows and made his side of the bed and put his blanket over her. She checked the changing room. No, he was not there, but unlike other days his clothes were not in a mess. She freshened up and reached the dressing table. His brooch was not there. Where is he? Has the war... Her heart skipped a beat. What if he had left and not even woken her up? " Daasi? Daasi?" She called as one of them walked in. " Ji Kuwaranisa?" " Where is Kunwarsa?" " He left early in the morning for Dangal and then a visit to the village. Do you need anything?" " No, You may go now." She put on the sindoor in a worry. Maybe something urgent has come up. She walked to the Puja room and was shocked. Her garlands were made, the Chandan was in place and ...

Sadh Puron

  Rasmo ka mela yaha pe khel rahe hai saare Aaja shamil ho isme zara thoda muskura de Seven months into her pregnancy, Bondita realised, almost to her amusement, that there were certain prejudices that even Aniruddha Roy Chowdhury gave in to. Ever since Koeli arrived, to help her out, as instructed by Kakababu, to her utter surprise Aniruddha gave in to Koeli putting a kajal tika behind her ear every time she stepped out, to avoid bad omens. He even willingly gave up the bedroom at one phone call from Trilochan insisting that the woman needs her space during her pregnancy. He ended up having a makeshift mattress as a bed, in the middle of the living room in the apartment, and he was more than willing to sleep there while Koeli stayed with Bondita. Although she liked to have the entire bed to herself, she sometimes missed their pillow talks. Aniruddha also made sure the household never ran out of supplies of pickles and sweets. Koeli didn’t lose a turn to tease Bondita about how th...

The New Capital

“Some dreams are once broken often come back as haunting nightmares.” The Padishah Begum received the news of the birth of a baby boy to Harka Bai at Sikri. She had arranged for a feast and celebration at Lahore and thanked the Almighty herself for this happiness. She prayed that the boy was safe. Hamida Banu had herself sent a messenger to the Padishah Begum at Lahore. The ladies celebrated for a week. The Padishah Begum had given away coins, and clothes to the needy and new clothes to the kin. The Emperor was on his way to Sikri as well. She had smiled at the happy faces savouring the wine and sweet dishes. She greeted and congratulated everyone around the Harem. The Timurid blood would be safe on the throne.   Jalal had visited once in the past few months, giving her the good news of Harka Bai conceiving again. He feared that people were conspiring at Agra. Hence, Harka Bai’s firstborns died, unnaturally. Ridiculous rumours were spread, about the Emperor killing his o...

What If...

Ajabdeh, played all night with the newfound puppy who was already keeping her on her toes. First, he jumps into the trolley bags and inspected her clothes, alarming Heer and making her laugh. He had fallen in love with a pink lingerie Ajabdeh tied to his head like a bow, laughing harder as he tried to open it, going in rounds. Heer saw her carefree laughter with a smile. She may not like the guy, but he did make her sister laugh. Heer shook her head. Something in her felt really awkward as she cleared her throat to ask "Jija??" "Hmm?" "Do you... umm... like Kunwar Pratap?" Heer looked scared to ask. "What?" She frowned and then smiled as the puppy licked her face. "Of course I like him! He is a friend." "Jija I meant..." "Good night Heeriye." She hugged her sister then picked the pup up and snuggled in her blanket as Heer stood watching. "Let's name you baby?" She heard Ajabdeh talk. "Umm...

Neelambargarh

  The fort of Neelambargarh was named so because it stood on a cliff above the low-lying plains surrounding it as if it was ready to touch the sky. The fort was surrounded by hilly forestland on three sides and extensive plain lands used for agriculture on another. The road winding up to Neelambargarh was guarded by three gateways and a secret tunnel, known only to the Neelambargarh royal family, led down from the five-storey palace to the river in the forestland. The kingdom of Neelambargarh was known across the land beyond the Heemdevi Mountains for its art and architecture. True indeed, like the myths it held, the stone walls of the fort and the castles shone in the sun like fire swayed by the wind. The gateways had extensive architecture and tales of Neelambargarh’s rich past and kings, engraved in stones, alongside nymphs and the several forms of their chief deity, The Wind, and his tales of miracles. Above the gate in local scriptures was poetry written in honour of the past ...

Understandings

After counting days, Ajabde was happy that she was going to Bijolia. She knew how eager her mother and Ratan would be to know about her new life. She couldn't wait to hug her mother and feel like... Home. She was selecting gifts for her parents and her siblings as per Ranima's instructions. Then suddenly an idea struck her mind. Her new family welcomed her with so much love and support. Especially Ranima and Majhli Maa Sa. She wanted to give them something. Suddenly she remembered that Ranima had loved her embroidery work on dupattas back in Bijolia so she called a Dasi and ordered some plain Chunris and embroidery threads. She had a lot of work to finish in a day before leaving.   Kunwar Pratap came back into the room to see her on the floor, right in the middle of the room with red, green, yellow, and pink all sorts of dupattas scattered. " What's all this?" He asked not sure if he should be asking. " I am making gifts. For Ranima, Majhli ma, Rani Dheer Bai...

Patralekha

Mujhse ye rishta jo, aa usse hai sawaare Chal sayane se thoda nadan bann ja tu Ashapurna walked out of the room with questioning eyes as Somnath shook his head. He had called Aniruddha as soon as Bondita complained of pain and uneasiness. He was already off to court and his house owner had reassured him that the news would reach him soon. He was supposed to come with the allopathic doctor. “I think it is time.” Ashapurna almost whispered to Somnath as Koeli rushed in with wet towels to comfort Bondita who appeared in a lot of pain. “Talk to Jetha Shoshur Moshai, please.” Somnath nodded and rushed downstairs where Batuk paced the room as Trilochan and Binoy sat on the couch. Ashapurna’s mother had taken Ashutosh with her for the day as soon as she heard.  “What do we do now?” Somnath broke the silence. “She was not due so soon.” Batuk frowned as his uncle gave him a disapproving stare making him stop. “Som, go and call Dai.” He insisted as Somnath remained frozen in his place. “We c...

Trouble In Paradise

Kyun na jaane teri chinta ho rahi hai mujhe Har ghadi ab kyun hai dhyan tera. "Eyes on the road." Aniruddha scolded almost in a reflex, putting his right hand vigilantly over the steering wheel. Bondita's painted hands were on the wheel but her eyes kept wandering to the cattle on either side of the road. "You can't be distracted while driving. You will kill someone." He said in a rather monotonous voice. His hand didn't leave the steering wheel nor did his eyes leave the road. But he made sure instinctively that his hands stayed furthest away from her touch. Bondita breathed in as the morning breeze hit her face. She had removed the saree from over her head when they had stopped by the road to exchange places.  "If you push the car into a tree again, it's your last lesson." He had warned while she giggled.  Bondita couldn't tell Aniruddha why she was distracted the last time. It was almost dusk and while he instructed her on the wheel,...